ই-শ্রম কার্ড কি? কি কি সুবিধা পাবেন?|E-shram Card Online Apply

Spread the love

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রকল্প ও যোজনা চালু করা হয়। যার মধ্যে একটি ই-শ্রম যোজনা। এই যোজনার জন্য আবেদন করলে আবেদনকারীকে একটি কার্ড প্রদান করা হয়। এই কার্ডটি আপনার থাকলে আপনি অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন। তাই লক্ষ লক্ষ মানুষজন এই E-shram card বানিয়েছেন। তবে এই ই-শ্রম কার্ড বানানোর পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ এমন সুযোগ সুবিধা রয়েছে যেগুলি অনেকেই জানেন না। যা নিয়ে আমি আজকের এই পোস্টে আলোচনা করবো।

ই-শ্রম কার্ড কি?(what is E-shram card)

আমাদের ভারত সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়( ministry of labour and employment) এর তরফ থেকে এই ই-শ্রম যোজনা কিংবা eshram Scheme এর সূচনা করা হয়েছে। সমাজের অসংগঠিত শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পটি চালু করা হয়। এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করলে আবেদনকারীকে একটি E-shram card দেওয়া হয়। যার মধ্যে ১২ সংখ্যার UAN নাম্বার থাকে, যার তথ্য শ্রম মন্ত্রালয়ের ডাটাবেসে Record থাকে। এই কার্ডটি করা থাকলে সরকারি বিভিন্ন রকমের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।

E-shram Online Portal Homepage

তাই আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে এই প্রকল্প সম্বন্ধে কিংবা এই ই-শ্রম কার্ড সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সঙ্গে এই কার্ডটি করা থাকলে কি সুযোগ সুবিধা পাবেন? এবং কিভাবে আপনি প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা পাবেন? ওইটা নিয়েও আলোচনা করবো। ফলে সমস্ত কিছু তথ্য পাওয়ার জন্য এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

যুবশ্রী প্রকল্প- প্রতিমাসে ১৫০০ টাকা|কিভাবে পাবেন?

কাদের জন্য এই ই-শ্রম কার্ড?

এই কার্ডটি সমাজের অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য। ভারত সরকারের তরফ থেকে Unrecognised Workers দের সংগঠিত করার জন্য এই কার্ডটি চালু করা হয়। যারা দিনমজুর, কৃষক, যারা কোন সরকারি কাজকর্ম করে না, তাদের জন্য এই ই-শ্রম কার্ড।

এই কার্ডটি তৈরি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত উল্লেখ করা হলো।

  • আবেদনকারীর বয়স (১৬-৫৯) বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • অসংগঠিত শ্রমিক হতে হবে। যেমন – যেকোনো ধরনের শ্রমিক, গৃহকর্মী, দিনমজুর, নির্মাণ কর্মী, কৃষক, দোকানদার, ফল বিক্রেতা, রিকশাচালক, ইত্যাদি।
  • ESIC & EPFO এর কর্মী হওয়া যাবে না।
  • সরকারি চাকরি করলে আবেদন করা যাবে না।
  • এবং Tax Payee হলে যোগ্য হবেন না।

তাহলে এটাই বোঝা গেল, আপনার বয়সসীমা যদি (১৬-৫৯) বছরের মধ্যে হয় এবং আপনি একজন অসংগঠিত শ্রমিক হয়ে থাকেন এখানে আবেদন করতে পারবেন।

এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য

e shram Card একটি National Database of Unrecognised Workers (NDUW). যা চালু করা হয়েছে কেন্দ্র সরকারের Ministry of Labour & Employment এর তরফ থেকে।

প্রথমত, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো সমস্ত ও অসংগঠিত শ্রমিকদের তথ্য শ্রম দপ্তরের Database এ রেকর্ড করা।

দ্বিতীয়ত, সমাজের অসংগঠিত শ্রমিকদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেওয়া এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করা। এবং এই প্রকল্পের আবেদন করার পর সরকারের তরফ থেকে আপনাকে একটি UAN(Universal Account Number) নাম্বার সহ E-shram Card দেওয়া হবে।

তৃতীয়ত, জরুরি অবস্থায় আর্থিকভাবে সাহায্য করা। এবং শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া।

e shram Card Benefits in Bengali (কি কি সুযোগ সুবিধা পাবেন?)

এই ই-শ্রম কার্ড শুধুমাত্র একটি কার্ড নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ Card .যার মধ্য দিয়ে আপনাকে সরকারি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। এই কার্ডের সুযোগ-সুবিধা গুলি নিচে দেওয়া হলো।

বিনামূল্যে দূর্ঘটনা বিমা: আপনার দুর্ঘটনায়( মৃত্যু বা সম্পূর্ণভাবে অক্ষমতায় ) আপনাকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে। এবং আংশিক ও অক্ষমতায় ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে।

সরকারি Scheme সুযোগ: সরকারের বিভিন্ন ধরনের scheme যেমন- স্বাস্থ্য সেবা, মাতৃকালীন সুবিধা ,পেনশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে আপনাদের আগে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।

কর্মসংস্থানের সুযোগ: এখানে যোগ্য শ্রমিকদের বিভিন্ন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা রয়েছে এবং ট্রেনিং করানোর পর কর্মসংস্থানও করানো হয়।

তাছাড়াও E-sharm পোর্টালে, আপনার মোবাইল নাম্বার দিয়ে Login করে, Looking for a job অপশনে এ ক্লিক করে ওখান থেকে বিভিন্ন কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন।

ভবিষ্যৎ সুযোগ-সুবিধা: যেহেতু এটি একটি কেন্দ্র সরকারের কার্ড, তাই পরবর্তীতে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা এই কার্ডের মাধ্যমে দেওয়া হবে।

PM Shram yogi maandhan Yojana: আপনার ই-শ্রম কার্ড থাকলে, আপনি এই maandhan যোজনার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই পেনশন প্রকল্পে আবেদন করলে আপনি ৬০ বছর পর প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা করে পাবেন।

কি কি ডকুমেন্টস লাগবে?

ই-শ্রম কার্ড তৈরি করার জন্য আপনাকে সঠিকভাবে আবেদন করতে হবে। এবং সঠিক ডকুমেন্টস দিয়ে আবেদন করতে হবে। এই E-shram Card এর জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগবে নিচে আলোচনা করা হলো।

  • আধার কার্ড
  • Aadhaar Card Link Mobile Number
  • Bank Passbook
  • Etc Extra Information – যদি আপনি দিতে চান
 Note: যদি কোনো শ্রমিকের আধার কার্ড না থাকে, তাহলে তিনি কাছাকাছি CSC সেন্টারে গিয়ে বায়োমেট্রিক দিয়ে আবেদন করতে পারেন।

e-shram Card Online Apply (কিভাবে আবেদন করবেন?)

ই-শ্রম কার্ড এর অনলাইন আবেদন দুই ভাবে করা যায়।(১) eshram.gov.in অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে (২) CSC সেন্টারে গিয়ে।

আপনাদের সুবিধার্থে দুটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করছি, যাতে আপনি যে কোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই অনলাইন আবেদন করতে পারেন।

১. অনলাইন আবেদন (eshram.gov.in)

সঠিকভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হলে আপনাকে নিচে Steps গুলো অনুসরণ করতে হবে।

e Shram Online Registration

E-shram Online Registration

প্রথমত, E-sharm এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান।REGISTER on eShram এই অপশনে ক্লিক করুন।

আপনার আধার কার্ডের নাম্বার, মোবাইল OTP, Aadhaar OTP দিয়ে Registration করুন।

E-shram Card Online Apply

অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার পর সাবমিট করলে আপনাদের সামনে আবেদন ফর্মটি খুলে যাবে। আপনাদের যাবতীয় তথ্য দিয়ে ফর্মটি সঠিকভাবে ফিলাপ করতে হবে। যেমন –

Personal Information: (নাম, ঠিকানা জাতি, বাবার নাম, Blood group, ইত্যাদি)

Nominee Details: আপনাকে Nominee Add করতে হবে। আপনি যাকে Nominee রাখতে চান তার তথ্য দেবেন Application Form এ।

Residential Details: এখানে আপনাকে আপনার ঠিকানা দিতে হবে। আপনার রাজ্যের নাম, জেলার নাম, গ্রামের নাম, ইত্যাদি।

Education Qualification: আপনারা শিক্ষাগত যোগ্যতা তথ্য দিতে হবে। এখানে কোনো মিনিমাম যোগ্যতার বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি যদি ক্লাস IV পাশ করে থাকেন, VIII  পাশ করে থাকেন, আবার মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে থাকেন, যে কোনো যোগ্যতা থাকলেই এখানে আবেদন করা যায়।

Occupation & Skills : আপনি কি কাজ করেন ওই কাজের তথ্য দিতে হবে কিংবা জীবিকা নির্বাচন করতে হবে। তার সাথে আপনার যদি কোনো Skills কিংবা দক্ষতা থেকে থাকে, এখানে Add করতে পারেন।

Bank Account Details: এই ফর্মের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ  Part হলো আপনার ব্যাংকের তথ্য দেওয়া। আপনার ব্যাংকের পাস বই অনুযায়ী এখানে Bank Account Number, IFSC code, আপনার নাম ইত্যাদি তথ্য দিয়ে Submit করতে হবে।

e shram Application Preview: সমস্ত যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাবমিট করার সঙ্গে সঙ্গে Application Form এর Preview অপশনটি খুলে যাবে। যেখানে আপনি প্রত্যেকটি তথ্য ভালোভাবে মিলিয়ে নেবেন এবং তারপর সাবমিট করবেন।

Preview চেক করে Submit করার সাথে সাথে আপনার ফর্মটি Successfully ভাবে সাবমিট হবে। এবং একটি E-shram Card Generated হবে।

২) CSC সেন্টার এর মাধ্যমে আবেদন

আপনি যদি নিজে থেকে অনলাইনে আবেদন করতে না চান, আপনি আপনার নিকটবর্তী CSC সেন্টারে গিয়ে এই e shram Card বানাতে পারবেন। আপনি শুধুমাত্র আপনার আধার কার্ড, ব্যাংক পাস বই, আধার লিঙ্ক মোবাইল নাম্বার, যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে যাবেন।

আপনার যাবতীয় ডকুমেন্টস নিয়ে আপনাকে একটি E-sharm কার্ড তৈরি করে দেবেন।

E-shram Card Download Online

ই-শ্রম কার্ড ডাউনলোড করার জন্য আপনাকে প্রথম Login করতে হবে।

  • প্রথমত, eshram.gov.in এ যান।
  • Login অপশনে ক্লিক করুন।
  • আপনার মোবাইল নাম্বার, এবং OTP দিয়ে Next করুন।
  • আপনার আধার নাম্বার দিন, এবং Aadhaar OTP দিয়ে Submit করুন।
  • Dashboard খুলে যাবে।
  • Download UAN Card অপশনে ক্লিক করুন। E-sharm Card এর PDF আপনার মোবাইলে সেভ হয়ে যাবে।
  • ওই eshram Card PDF আপনি যেকোনো জেরক্স দোকান থেকে প্রিন্ট করতে পারেন।

Frequently Asked Questions

ই-শ্রম (E-shram) কার্ড কি?

e shram কার্ড হলো অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার পরিচয় পত্র। যে কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।

এই ই-শ্রম কার্ড কি বিনামূল্যে করা যায়?

হ্যাঁ, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই কার্ড তৈরি করা যায়, e shram এর অনলাইন পোর্টাল থেকে।

E- Shram Card কি Renewal করতে হয়?

না, এই কার্ড একবার তৈরি করার পর Renew করতে হয় না। তবে আপনি যদি কোন তথ্য সংশোধন করতে চান অবশ্যই করতে পারবেন।

ই-শ্রম কার্ডের মাধ্যমে ৩০০০ টাকা কিভাবে পাওয়া যায়?

এই কার্ডের মাধ্যমে সরাসরি এই ৩০০০ টাকা দেওয়া হয় না। আপনি এই কার্ডের মাধ্যমে PM Shram yogi maandhan Yojana এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এবং ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হলে প্রতি মাসে পেনশন হিসাবে ৩০০০ টাকা পেতে পারেন।

What is UAN?

UAN Universal Account number একটি ১২ সংখ্যার নাম্বার, যা আপনার ই-শ্রম কার্ডে থাকবে।

Conclusion

এই ই-শ্রম কার্ড আমাদের ভারতবর্ষের অসংগঠিত সমস্ত শ্রমিকদের জন্য চালু করা হয়েছে। যার জন্য আপনি অনলাইনে আবেদন করতে পারেন এবং এই কার্ডটি তৈরি করতে পারেন। এই কার্ডের মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং দুর্ঘটনা বীমা  টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি একজন অসংগঠিত শ্রমিকের আওতায় পড়েন, অবশ্যই এই কার্ডটি বানিয়ে রাখতে পারেন। যা আপনার কাজে লাগবে। আপনার যদি এই সম্বন্ধে কোন কিছু মতামত থাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন। ধন্যবাদ।।

গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক

E-shram Official Website: Visit Here

Mandhan Yojana: Official Website

সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প: আবেদন করুন


Spread the love

Leave a Comment