পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম জনপ্রিয় সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্প হলো রূপশ্রী প্রকল্প। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারের কন্যাদের বিবাহের সময় এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য এই প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, আবেদন করার পরেও কারও টাকা মঞ্জুর হয় না। এর প্রধান কারণ হলো আবেদনপত্রে ভুল করা অথবা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না করা। তবে সঠিকভাবে আবেদন করলে অবশ্যই টাকা পাওয়া যাবে।
আজকের এই গাইডে আমরা দেখব—রূপশ্রী প্রকল্প আসলে কী, কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, কী কী ভুল করলে আবেদন বাতিল হতে পারে এবং কিভাবে নির্ভুলভাবে আবেদন করলে সহজেই টাকা পাওয়া যাবে।
রূপশ্রী প্রকল্প কী (What is Rupashree Prakalpa?)
রূপশ্রী প্রকল্প হলো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি আর্থিক সহায়তা প্রকল্প। এই প্রকল্পে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের কন্যাদের বিবাহের সময় এককালীন ২৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়। মূলত দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিবাহের খরচে স্বস্তি দেওয়ার জন্যই এটি চালু করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য
- দরিদ্র পরিবারের আর্থিক চাপ কমানো
- কন্যা সন্তানকে বোঝা মনে না করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো
- অল্পবয়সে বিয়ে বন্ধ করা (Child Marriage রোধ)
- নারীর সম্মান ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা
সম্পর্কিত পোস্ট
কারা এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন? (সংক্ষেপে যোগ্যতা)
১) আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
২) পাত্রের বয়স হতে হবে ২১ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
৩) আবেদনকারীর পরিবারের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে হবে।
৪) আবেদনকারীর নামেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
৫) পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
৬) পারিবারিক বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা কিংবা তার কম হতে হবে।
আবেদনপত্র বাতিল হওয়ার প্রধান ৫টি কারণ (Top 5 Reasons for Application Rejection)
কারণ ১: ডকুমেন্ট সংক্রান্ত ভুল (ত্রুটিপূর্ণ বা অসম্পূর্ণ নথি)
অনেক সময় দেখা যায় আবেদনকারীরা প্রয়োজনীয় নথি সম্পূর্ণ জমা দেন না বা ভুল ডকুমেন্ট জমা দেন। যেমন—ভোটার আইডি বা আধার কার্ডে নামের বানান আলাদা, জন্ম সনদ নেই, অথবা আয়ের সনদ মেয়াদোত্তীর্ণ। এগুলোই আবেদন বাতিলের বড় কারণ।
কারণ ২: আবেদনপত্র পূরণে ভুল (কাটাকাটি বা ভুল তথ্য প্রদান)
ফর্ম পূরণের সময় যদি কাটাকাটি করা হয় বা ভুল তথ্য দেওয়া হয় (যেমন—আয়ের পরিমাণ ভুল লেখা, বানান ভুল, নামের অমিল), তাহলে আবেদন গ্রহণ হয় না। সরকার চাইছে একেবারে পরিষ্কার ও সঠিকভাবে পূরণকৃত ফর্ম।
কারণ ৩: ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমস্যা (নিষ্ক্রিয় বা জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট)
আবেদনকারীর নিজের নামে সক্রিয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক। অনেক সময় মেয়ের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকে না বা জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট দেওয়া হয়, সেই ক্ষেত্রে আবেদন বাতিল হয়। এছাড়া নিষ্ক্রিয় (Dormant) অ্যাকাউন্ট থাকলেও টাকা জমা হয় না।
কারণ ৪: সময়সীমা না মানা (বিয়ের ভুল সময়ে আবেদন)
বিয়ের তারিখের আগে বা পরে আবেদন জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। কেউ যদি বিয়ের অনেক আগেই আবেদন করে ফেলেন, বা বিয়ের পর দেরি করে আবেদন করেন, তাহলে সেটি বাতিল হয়ে যায়।
কারণ ৫: যোগ্যতার শর্ত পূরণ না হওয়া (বয়স বা আয়ের ভুল তথ্য)
- মেয়ের বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয়
- পাত্রের বয়স ২১ বছরের নিচে হয়
- পরিবারের আয় ১.৫ লক্ষ টাকার বেশি হয় এই শর্তগুলির যেকোনো একটি পূরণ না হলে আবেদন সরাসরি বাতিল হয়ে যায়।
নির্ভুল আবেদন করার জন্য ধাপে ধাপে গাইড (Step-by-Step Guide)

সঠিক আবেদনপত্র কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন?
রূপশ্রী প্রকল্পের ফর্ম পাওয়া যায়:
- সংশ্লিষ্ট ব্লক অফিসে (BDO)
- পৌরসভা অফিস
- পুরসভার ওয়ার্ড অফিস
- তাছাড়াও আপনার নিকটবর্তী Registry Marriage Office এ যোগাযোগ করুন।
ফর্ম ফিলাপ করার সময় কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখবেন?
ফর্মে নাম, জন্মতারিখ এবং ঠিকানা অবশ্যই আধার কার্ড/ভোটার আইডির সঙ্গে মিল থাকতে হবে।
কোনো কাটাকুটি করা যাবে না।
পরিষ্কার অক্ষরে কালো বা নীল কলমে লিখতে হবে।
আয়ের সনদ, জন্ম সনদ এবং বিয়ের আমন্ত্রণপত্র সঠিকভাবে দিতে হবে।
ডকুমেন্টগুলি কীভাবে সাজিয়ে জমা দেবেন?
নিচে দেওয়া সমস্ত ডকুমেন্টস বর এবং কনে উভয়ের জন্যই লাগবে। সব নথির ফটোকপি নিজে সই করে জমা দিতে হবে।
১) বয়সের প্রমাণপত্র: আধার কার্ড/ভোটার কার্ড/মাধ্যমিক সার্টিফিকেট/জন্ম সার্টিফিকেট/ প্যান কার্ড, ইত্যাদি।
২) বিবাহ প্রমাণ: প্রয়োজনে বিয়ের কার্ড ও পাত্র-পাত্রীর বয়স প্রমাণপত্রও দিতে হবে।
৩) ছবি: ছেলে ও মেয়ের রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
৪) ব্যাংক পাস বই: Bank Passbook (Account Number, IFSC code, Branch Name)
৫) আয়ের প্রমাণ: পারিবারিক আয়ের প্রমাণ লাগবে।
ডকুমেন্টগুলোকে নির্দিষ্ট ক্রমে সাজাতে হবে (আবেদনপত্র, জন্ম সনদ, আয়ের সনদ, ভোটার/আধার, ব্যাঙ্ক পাসবইয়ের প্রথম পাতা ইত্যাদি)
এছাড়াও ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসে যা কিছু ডকুমেন্টস এর কথা বলবে, ওই সমস্ত ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হবে।
💻কিভাবে, কোথায় আবেদন করবেন?
১) প্রথমত, আপনাকে যেতে হবে আপনার এলাকার ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসে। পাত্র এবং পাত্রীর সঙ্গে তার বাড়ির লোকজন এবং গ্রামের এক থেকে দুইজন যাবেন।
২) দ্বিতীয়তঃ, আপনাকে ওই অফিসে সমস্ত ডকুমেন্টস জমা করতে হবে। ওখানে ফর্ম ফিলাপ হবে এবং রেজিস্ট্রি ম্যারেজের জন্য রেজিস্ট্রেশন হবে।
৩) সাক্ষী হিসাবে বাড়ির লোকজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর একজনের স্বাক্ষর লাগবে।
৪) রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে একটি আবেদন ফর্ম দেওয়া হবে।
৫) আবেদন ফর্ম নিয়ে জমা করতে হবে আপনার এলাকার বিডিও অফিসে।
৬) BDO অফিস রূপশ্রী প্রকল্পের ফর্ম জমা দেওয়ার পর আপনার কাজ শেষ।
৭) এবার আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে পাত্রীর ব্যাংক একাউন্টে টাকা আসবে।
- WB টোটো অনলাইন রেজিস্ট্রেশন: কিভাবে আবেদন করবেন? বিস্তারিত তথ্য জানুন
- বিদেশে পড়ার জন্য এডুকেশন লোন(Education Loan): জানুন আবেদন ও ডকুমেন্ট চেকলিস্ট
- সাইবার সিকিউরিটি কোর্স (Cyber Security Course Admission): জানুন ভর্তি, ফি এবং ক্যারিয়ারের সুযোগ
আবেদন করার পর আপনার করণীয় (What to do After Applying)
কীভাবে আবেদনের স্ট্যাটাস ট্র্যাক করবেন?
জমা দেওয়া অফিস থেকে রিসিভিং কপি সংগ্রহ করুন
BDO অফিস বা পৌরসভায় যোগাযোগ করে আবেদনের স্ট্যাটাস জানতে পারবেন
👉রূপশ্রী প্রকল্পের Application Status Check
আবেদন মঞ্জুর হলে টাকা কবে এবং কীভাবে পাবেন?
আবেদন অনুমোদন হলে সাধারণত বিয়ের কিছুদিন পরেই সরাসরি আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৫,০০০ টাকা জমা হয়।
যদি আবেদন বাতিল হয়ে যায়, তাহলে কী করবেন?
পুনরায় আবেদন করার সুযোগ আছে কি?
হ্যাঁ, যদি ভুল ডকুমেন্ট বা তথ্য দেওয়ার কারণে আবেদন বাতিল হয়, তাহলে পুনরায় আবেদন করা যায়। তবে শর্ত পূরণ না হলে নতুন করে আবেদন করার সুযোগ নেই।
কোথায় এবং কার সাথে যোগাযোগ করবেন?
প্রথমে স্থানীয় BDO অফিস বা পৌরসভা অফিসে যোগাযোগ করুন
প্রয়োজন হলে জেলা সমাজকল্যাণ দফতরে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে পারেন
Frequently Asked Questions – FAQ
দরিদ্র মেয়েদের বিবাহের জন্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
না, পাত্রের বয়স অবশ্যই ২১ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
রেজিস্ট্রেশনের আগে বা সঙ্গে সঙ্গে আবেদন করতে হয়। দেরি করলে আবেদন বাতিল হবে।
আবেদন অনুমোদিত হলে সাধারণত ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে আসে।
হেল্প লাইন নম্বর: 033-23373846 ; Email id: support.rupashree-wb@nic.in
উপসংহার
রূপশ্রী প্রকল্প অনেক দরিদ্র পরিবারের কাছে সত্যিকারের আশীর্বাদ। তবে ছোটখাটো ভুলের কারণে বহু আবেদন বাতিল হয়ে যায়। তাই ডকুমেন্ট সঠিক রাখা, ফর্ম ঠিকভাবে পূরণ করা এবং নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন করাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
👉 মনে রাখবেন, সরকারি প্রকল্পের সব নিয়ম ভালোভাবে পড়ে আবেদন করলেই সহজে এই ২৫,০০০ টাকা পাওয়া সম্ভব।
রুপশ্রী অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | Visit Here |
Rupashree Prakalpa More Details | Visit Here |

আমি Biswajit Mandal, একজন অভিজ্ঞ Content Creator, YouTuber, এবং Professional Content Writer। গত ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি নিয়মিতভাবে সরকারি প্রকল্প, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, ক্যারিয়ার গাইড, স্কলারশিপ, ও অনলাইন ফর্ম ফিলাপ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করে আসছি।