সরকারি বিভিন্ন সার্টিফিকেট গুলির মধ্যে Domicile Certificate একটি গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেট। যা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে। সবার প্রথমেই আপনাদের বলে দিই, এই Domicile Certificate এর বাংলা মানে হলো স্থায়ী বাসিন্দার সার্টিফিকেট। তাই আপনি যে রাজ্যে কিংবা যে শহরে বসবাস করছেন, ওখানকার বাসিন্দার প্রমাণপত্র হিসেবে এই সার্টিফিকেটটি বানাতে হয়। এই WB Domicile Certificate বিভিন্ন কলেজে ভর্তির জন্য, চাকরির ক্ষেত্রে, বিভিন্ন প্রকল্পের আবেদন করতে হলে, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজে লাগে। তাই আপনার প্রয়োজন হলে এই সার্টিফিকেটটি এখন বর্তমানে অনলাইনে বাড়িতে বসে সম্পূর্ণ ফ্রিতে বানাতে পারেন।
এবার অনলাইনে যেমন খুব সহজেই আবেদন করে এই সার্টিফিকেটটি পাওয়া যায়। তবে তার জন্য অবশ্যই আপনাকে সঠিকভাবে আবেদন করতে হবে। সঠিকভাবে ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে। তাই আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা বিস্তারিত এই টপিক নিয়ে আলোচনা করবো। যেমন – এই WB Domicile Certificate কি? কিভাবে আবেদন করতে হবে? কি কি সঠিক ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে? আবেদন হয়ে গেলে কি করতে হবে? ইত্যাদি।
WB Domicile Certificate কি?
আমরা যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা, কিংবা আমরা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে যে জেলার অন্তর্গত রয়েছি, ওখানকার স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণ হিসাবে আমাদের এই সার্টিফিকেটটি বানাতে হয়। এই Domicile সার্টিফিকেট বানালে আপনি প্রমাণ করতে পারবেন আপনি ওই নির্দিষ্ট স্থানের স্থায়ী বাসিন্দা। এটি একটি সরকারি নথি হিসেবে কাজ করে। আপনি যেকোনো জায়গায় স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে, আপনার স্থায়ী বাসিন্দার সার্টিফিকেট টি দেখাতে পারেন।
এই WB Domicile Certificate আপনার এলাকার SDO Office থেকে Approval করা হয়। প্রতিটি রাজ্যের মতো ,আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ও একটি পোর্টাল রয়েছে। যেখানে গিয়ে এই সার্টিফিকেটের জন্য অনলাইন আবেদন করতে হয়।
পশ্চিমবঙ্গ Domicile Certificate কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
সবার প্রথমেই আমরা জেনে নিই, এই সার্টিফিকেটটি কি কি কাজে লাগে ? এবং এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষা ক্ষেত্রে: বিভিন্ন কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য অনেক সময় এই সার্টিফিকেট দরকার হয়। আমার অনেক বৃত্তি ও স্কলারশিপের আবেদন করার সময় এই সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
চাকরির ক্ষেত্রে: রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের এমন অনেক চাকরি রয়েছে। যেখানে ফর্ম ফিলাপ করার সময় ডকুমেন্টস হিসাবে এই সার্টিফিকেট আপলোড করতে হয়।
সরকারি সুবিধা: সরকারি বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য এই সার্টিফিকেটটি লাগে।
অন্যান্য ক্ষেত্রে: আরো অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে, লাইসেন্স ও Permit পাওয়ার জন্য এই Domicile Certificate এর প্রয়োজন হয়।
সম্পর্কিত পোস্ট
যোগ্যতা যাচাই করুন (Eligibility)
যেকোনো সার্টিফিকেট কিংবা যেকোনো ফর্ম ফিলাপ করার আগে অবশ্যই যোগ্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। কারণ যোগ্যতা না থাকলে আবেদন করার পরও আপনার আবেদন ফর্মটি রিজেক্ট করা হবে। তাই সবার প্রথম দেখে নিন, এই সার্টিফিকেটের অনলাইন আবেদন করতে হলে-
কি কি যোগ্যতা দরকার? কিংবা কারা কারা আবেদন করতে পারবে?
- আপনাকে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে।
- আপনি যে ঠিকানায় বর্তমানে বসবাস করছেন, ওই ঠিকানায় বিগত ১৫ বছর ধরে বসবাস করতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র(important Documents)
আপনার সার্টিফিকেটটি Approved হবে কি, হবে না? এটা নির্ভর করে আপনি সঠিকভাবে ডকুমেন্টস আপলোড করেছেন কিনা। এই সমস্ত সরকারি সার্টিফিকেটের জন্য সঠিকভাবে, সঠিক ডকুমেন্টস আপলোড করতে হয়। এই সার্টিফিকেটের জন্য প্রয়োজনীয় কি কি ডকুমেন্টস লাগবে নিচে আলোচনা করা হলো-

WB Domicile Certificate Important Documents List
১. বসবাসের প্রমাণ(Residential Proof ):বিদ্যুৎ বিল, রেশন কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট, ভাড়ার চুক্তি কিংবা Rent Agreement (যদি আপনি ভাড়া বাড়িতে থাকেন), ড্রাইভিং লাইসেন্স, Govt id card, Defence id card (যেকোনো একটি)
২. পরিচয় পত্রের প্রমাণ(Identity Proof): প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স।(যেকোনো একটি)
৩. Other Relevant Documents: আপনি পশ্চিমবঙ্গে ১০ থেকে ১৫ বছর বসবাস করছেন তার প্রমাণ হিসেবে ডকুমেন্টস দরকার। আপনার নামে যদি কোনো জমির রেকর্ড কিংবা দলিল না থাকে, আপনার বাবার জমির রেকর্ড কিংবা দলিল আপলোড করতে পারেন।
৪. জন্ম প্রমান পত্র(Proof of Birth): জন্ম সার্টিফিকেট/ মাধ্যমিকের এডমিট কার্ড (যেকোনো একটি)
৫. আবেদনকারীর ছবি(Photograph): যার নামে সার্টিফিকেটটি হচ্ছে তার পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি লাগবে।
Documents Upload Size & Format
কোন ডকুমেন্টস কত KB এর মধ্যে এবং কোন ফরমেটে আপলোড করবেন দেখে নিন-
- Residential Proof : ১৫০ KB এর মধ্যে আপলোড করতে হবে।(JPG, jpeg,png, pdf)
- Identity Proof: ৫১২ KB এর মধ্যে আপলোড করতে হবে। (JPG, jpeg,png, pdf)
- Other Relevant Documents: ১০২৪ KB এর মধ্যে আপলোড করতে হবে। (JPG, jpeg,png, pdf)
- Proof of Birth: ২০০ KB এর মধ্যে আপলোড করতে হবে। (JPG, jpeg,png, pdf)
- Photograph: ১০২৪ KB এর মধ্যে আপলোড করতে হবে। (JPG, jpeg,png)
কিভাবে অনলাইন আবেদন করবেন?
এবার এই WB Domicile Certificate এর জন্য কিভাবে কোন পোর্টালে গিয়ে ধাপে ধাপে আবেদন করতে হবে? নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

WB Domicile Certificate Online Apply
১. প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের E-District 2.0 পোর্টালে যান।
২. ডানদিকে Signup অপশন এ ক্লিক করুন। আপনার নাম, ইমেল আইডি, মোবাইল নাম্বার এবং Username দিয়ে রেজিস্টার করুন।
৩. এবার আপনার Username অথবা আপনার Registered Email id দিয়ে Login করুন।
৪. তারপর Service অপশনে ক্লিক করুন। তারপর Certificate সিলেক্ট করুন। তারপর Local Residence (Domicile) Certificate অপশন এ ক্লিক করুন। এরপর Accept করুন।
৫. আবেদন ফর্মটি খুলে যাবে। এখানে আপনাকে মোট চারটি ধাপে ফর্মটি ফিলাপ করতে হবে সঠিকভাবে। Applicant Basic information, Present Address, Application Place of birth, Particular of stay in last 15 years.
৬. প্রতিটি অপশন প্রতিটি ঘরে সঠিক তথ্য দিয়ে সঠিকভাবে ফর্ম ফিলাপ করুন। যেমন- আপনার নাম, বাবার নাম, মোবাইল নাম্বার, জন্ম তারিখ, email id, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ঠিকানা ইত্যাদি।
৭. এরপর বামদিকে Supporting Documents অপশনে ক্লিক করুন। এবং যাবতীয় সমস্ত ডকুমেন্টস নির্দিষ্ট সাইজের মধ্যে আপলোড করুন। এবং Save করুন।
৮. Save হওয়ার পর, Preview চেক করুন এবং সমস্ত কিছু দেখুন ঠিকঠাক ফিলাপ করেছেন কিনা।
৯. ফর্মের Preview দেখার পর ঠিক থাকলে, Submit অপশনে ক্লিক করুন।
১০. Application Form Submit করার পর আপনাকে AIN নাম্বার দেওয়া হবে। এবং আপনি Acknowledgement Slip ডাউনলোড করতে পারবেন।
- WB টোটো অনলাইন রেজিস্ট্রেশন: কিভাবে আবেদন করবেন? বিস্তারিত তথ্য জানুন
- বিদেশে পড়ার জন্য এডুকেশন লোন(Education Loan): জানুন আবেদন ও ডকুমেন্ট চেকলিস্ট
- সাইবার সিকিউরিটি কোর্স (Cyber Security Course Admission): জানুন ভর্তি, ফি এবং ক্যারিয়ারের সুযোগ
Domicile Certificate Application Status Check
এইভাবে আপনার সম্পূর্ণ ফর্ম ফিলাপ হয়ে যাবে। এবার আপনাকে কিছুদিন পর স্ট্যাটাস চেক করতে হবে।
কিভাবে আপনার ওই AIN নাম্বার দিয়ে স্ট্যাটাস দেখবেন নিচে আলোচনা করা হলো।
- E-Distric ওয়েবসাইটে যান।
- Login করুন আপনার Username এবং OTP দিয়ে।
- Dashboard খুলে যাবে। এখানে আপনার সামনে দেখতে পাবেন Application Status. আপনার Certificate টি Pending, Reject, Approved.
- Reject হলে কি কারণে রিজেক্ট করা হয়েছে, আপনাকে দেখিয়ে দেবে।
কিভাবে WB Domicile Certificate Download করবেন?
Application Status যদি Approved হয়, তাহলে আপনি খুব সহজে WB Domicile Certificate Download করতে পারবেন।

WB Domicile Certificate Download করার জন্য Approved লেখার ডানদিকে ⬇️ এইরকম অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে PDF টি আপনার Mobile এ সেভ হয়ে যাবে। এবার ওই PDF আপনি যেকোনো Xerox দোকান/ অনলাইন দোকান থেকে কালার প্রিন্ট করে ব্যবহার করতে পারেন।

WB Domicile Certificate এর বৈধতা
যেকোনো সার্টিফিকেট এর বৈধতা যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ Certificate এর Validity শেষ হয়ে গেলে ওই সার্টিফিকেটের আর কোন মূল্য থাকেনা। তাই সার্টিফিকেটের বৈধতা কিংবা Validity যাচাই করা অবশ্যই প্রয়োজন।
এবার সাধারণভাবে পশ্চিমবঙ্গের এই ধরনের সমস্ত সার্টিফিকেট গুলির বৈধতা থাকে ৬ মাস।
তাই এই WB Domicile Certificate এর Validity/ বৈধতা ৬ মাস থাকে।
Frequently Asked Questions
পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণ হিসাবে এই সার্টিফিকেট বানাতে হয়। এই সার্টিফিকেট এর জন্য অনলাইন এবং অফলাইনে আবেদন করা যায়। যা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে।
ভোটার কার্ড/ আধার কার্ড /জন্ম সার্টিফিকেট/ জমির রেকর্ড কিংবা দলিল/ panchayat residence certificate, PAN Card, Driving licence, passport, Etc – এই সমস্ত ডকুমেন্টস গুলির মধ্যে কোনটির প্রমাণ হিসেবে কি ডকুমেন্টস লাগবে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
অনলাইনে আবেদন করার পর যদি আপনার সমস্ত কিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে মিনিমাম তিন থেকে সাত দিন এর মধ্যে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।
পশ্চিমবঙ্গের Domicile Certificate এর Validity ৬ মাস থাকে।
Conclusion
তাই স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণ হিসাবে আপনি এই WB Domicile Certificate এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এই সার্টিফিকেট এর জন্য সম্পূর্ণ ফ্রিতে আবেদন করা যায়। তাই প্রয়োজন হলে খুব সহজেই অনলাইনে আপনি এই সার্টিফিকেট এর জন্য Apply করতে পারেন। এবার এই সার্টিফিকেট সংক্রান্ত যদি কোন আপনাদের প্রশ্ন থাকে আমাকে কমেন্ট করতে পারেন। ধন্যবাদ।।
▪️আরো এই ধরনের পোস্ট: পড়ুন এখানে
▪️E-Distric Official Website: Apply Here

আমি Biswajit Mandal, একজন অভিজ্ঞ Content Creator, YouTuber, এবং Professional Content Writer। গত ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি নিয়মিতভাবে সরকারি প্রকল্প, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, ক্যারিয়ার গাইড, স্কলারশিপ, ও অনলাইন ফর্ম ফিলাপ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করে আসছি।