কম পুঁজিতে মোবাইল রিপেয়ারিং ব্যবসা | Mobile Repairing Business Low Investment|কিভাবে শুরু করবেন?

Spread the love

মোবাইল এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সবচেয়ে জরুরি জিনিস। ফোনে সামান্য সমস্যা হলেই আমরা ছুটে যাই রিপেয়ারিং দোকানে। এই চাহিদাকেই কাজে লাগিয়ে কম পুঁজিতে একটি মোবাইল রিপেয়ারিং ব্যবসা শুরু করা আজ খুবই বাস্তব এবং লাভজনক একটি পথ। বিশেষ কোনো বড় ডিগ্রি না থাকলেও, হাতে-কলমে স্কিল থাকলে এই কাজ থেকে নিয়মিত আয় করা সম্ভব। অনেকেই ঘর থেকেই এই ব্যবসা শুরু করে ধীরে ধীরে ভালো রোজগারের জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছেন।

তাই এই পোষ্টের মাধ্যমে সহজ ভাষায় জানবো কেন এই ব্যবসাটি লাভজনক, কী কী স্কিল ও টুলস লাগবে, কত খরচে শুরু করা যায় এবং আয়ের সম্ভাবনা কতটা। যদি আপনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।

কেন এই ব্যবসাটি লাভজনক?

ক্রমবর্ধমান চাহিদা

প্রায় প্রতিটি বাড়িতে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ আছে। ছোটখাটো স্ক্রিন, ব্যাটারি, চার্জিং বা সফটওয়্যার সমস্যা প্রতিদিনই আসে — তাই কাস্টমার নিয়মিত আসে। তার জন্য এই ব্যবসার ডিমান্ড কোনদিনই কমবে না।

কম প্রাথমিক বিনিয়োগ

এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য বড়ো কারখানা বা দোকান লাগেনা। বাড়ির একটি ছোট রুম অথবা টেবিল থেকেই শুরু করা যায়। তাই শুরু করার খরচ তুলনামূলক কম হয়।

ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল (Required Skills)

তবে এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য কিছু স্কিল আপনাদের জানতে হবে। তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

  • হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার জ্ঞান
  • ফোন খুলে পার্টস চিনতে জানেন।
  • ব্যাটারি, ডিসপ্লে, চার্জিং পোর্ট, মাদারবোর্ড সংক্রান্ত বেসিক বোঝেন।
  • সফটওয়্যার রিকভারি, ফ্যাক্টরি রিসেট, ভাইরাস রিমুভ, বুট-ইস্যু সমাধান করতে পারেন।
  • সমস্যা খুঁজে বের করার ক্ষমতা (Troubleshooting)
  • দ্রুত সমস্যা শনাক্ত করে সঠিক সমাধান দিতে পারবেন।
  • কোন সমস্যা মেরামতযোগ্য, কোনটা পার্টস বদল লাগবে — তা ঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।
  • ভালো গ্রাহক পরিষেবা (Good Customer Service)
  • সময়মতো কাজ করা, সঠিক দাম নেওয়া, পরিষ্কার ব্যাখ্যা – এসব গ্রাহক ধরে রাখে।

মোবাইল রিপেয়ারিং ব্যবসার জন্য কোন কোর্স করতে হবে?

মোবাইল রিপেয়ারিংয়ের জন্য সাধারণত তিন ধরনের কোর্স পাওয়া যায়।

১. বেসিক মোবাইল রিপেয়ারিং কোর্স

এই কোর্সে শেখানো হয়: মোবাইল খোলা ও লাগানো, ডিসপ্লে, ব্যাটারি, স্পিকার, মাইক বদলানো, চার্জিং সমস্যা ঠিক করা।

কোর্স সময়: ১ থেকে ২ মাস
খরচ: প্রায় ₹৫,০০০ – ₹১০,০০০
কার জন্য ভালো: একদম নতুন যারা শুরু করছেন

২. অ্যাডভান্সড মোবাইল রিপেয়ারিং কোর্স

এখানে শেখানো হয়: মাদারবোর্ড রিপেয়ার, IC, CPU হিটিং ও চেঞ্জ, শর্ট, নেটওয়ার্ক সমস্যা ঠিক করা।

কোর্স সময়: ২ থেকে ৩ মাস
খরচ: প্রায় ₹১৫,০০০ – ₹৩০,০০০
কার জন্য ভালো: যারা সিরিয়াসভাবে ব্যবসা করতে চান

৩. মোবাইল + ল্যাপটপ রিপেয়ারিং কম্বো কোর্স

এই কোর্সে মোবাইলের সাথে ল্যাপটপও শেখানো হয়।

কোর্স সময়: ৩ থেকে ৬ মাস
খরচ: প্রায় ₹৩০,০০০ – ₹৫০,০০০

মোবাইল রিপেয়ারিং ব্যবসার জন্য কোন স্কিলস শিখতে হবে?

শুধু কোর্স করলেই হবে না, কিছু স্কিল নিজে থেকে গড়ে তুলতে হবে।

হার্ডওয়্যার জ্ঞান: মোবাইলের ভেতরের পার্টস চেনা

ট্রাবলশুটিং স্কিল: সমস্যা দেখে বুঝতে পারা কোথায় দোষ

সোল্ডারিং স্কিল: IC ও ছোট পার্টস ঠিকভাবে লাগানো

ধৈর্য ও মনোযোগ: কাজ ছোট হলেও খুব সাবধানে করতে হয়

গ্রাহক ব্যবহারের দক্ষতা: কাস্টমারের সাথে ভালো ব্যবহার

কোথায় গিয়ে মোবাইল রিপেয়ারিং শিখবেন?

আপনি চাইলে এই তিন জায়গা থেকে শিখতে পারেন।

১. ITI বা সরকারি ট্রেনিং সেন্টার

কম খরচে ভালো ট্রেনিং

কোথাও কোথাও সরকারি সার্টিফিকেটও দেয়

২. প্রাইভেট মোবাইল রিপেয়ারিং ইনস্টিটিউট

হাতে-কলমে শেখায়

বাজারের আপডেটেড টেকনোলজি শেখানো হয়

৩. লোকাল মোবাইল দোকানে কাজ শিখে

সরাসরি কাজ করে শেখা যায়

টাকা না দিয়েও শেখার সুযোগ থাকে

তবে সময় একটু বেশি লাগে

মোট খরচ কত হতে পারে?

একদম আনুমানিক হিসাব নিচে দেওয়া হলো।

কোর্স ফি: ₹১০,০০০ – ₹৩০,০০০

বেসিক টুলস: ₹৫,০০০ – ₹১০,০০০

ছোট দোকান বা বাড়ি থেকে শুরু: ₹৫,০০০ – ₹১৫,০০০

👉 মোট মিলিয়ে শুরু করতে প্রায় ₹২০,০০০ থেকে ₹৫০,০০০ হলেই চলে।

কয় মাসের মধ্যে কাজ শেখা যায়?

বেসিক কাজ: ১–২ মাস

ভালোভাবে রিপেয়ারিং: ৩ মাস

একদম প্রফেশনাল হতে: ৬ মাসের মতো সময় লাগে

নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে শেখা আরও দ্রুত হয়।

কী কী যন্ত্রপাতি বা টুলস লাগবে? (Tools & Equipment)

এই mobile repairing business শুরু করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ও টুলস লাগবে। যা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

Mobile_Repairing_Toolkit
Mobile Repairing Toolkit

১) বেসিক রিপেয়ারিং টুলকিট (Basic Toolkit)

২) পছন্দের সরঞ্জাম: পচ-স্ক্রু ড্রাইভার সেট (Phillips, Torx), স্পুডার, পিকস, সুক্লিপস, টুইজার।

৩) হেলিং স্ট্যান্ড / ভ্যাকুয়াম সাক – ডিসপ্লে খুলতে সহজ হয়।

৪) হট এয়ার গন (SMD কাজ ও গ্লু আলাদা করতে), স্প্রুগার।

৫) মিনি-মাল্টিমিটার – বিদ্যুৎ সমস্যা চেক করার জন্য।

৬) লাইটিং লুপ বা ম্যাগনিফায়ার (ছোট অংশ দেখার জন্য)।

৭) প্রাথমিক খরচ (টুলস): সাধারণত ₹5,000–₹20,000 মধ্যে টুলকিট ও বেসিক যন্ত্র পাওয়া যায়।

৮) সফটওয়্যার ও ডায়াগনস্টিক টুলস

৯) ফার্মওয়্যার ফ্ল্যাশিং টুলস, ড্রাইভার প্যাক, FRP/Unlock সফটওয়্যার (বাজারভিত্তিক)।

১০) কেস গঠনে একটি ভালো ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট দরকার হবে।

কীভাবে ব্যবসা শুরু করবেন? (Step-by-Step Guide)

ধাপ ১: স্কিল তৈরি করুন (প্রশিক্ষণ নিন)

স্থানীয় ট্রেনিং সেন্টার, ITI বা অনলাইন কোর্স করে বেসিক ও অ্যাডভান্সড স্কিল নিন।

প্রথমে বন্ধুর ফোন/পুরনো ডিভাইস নিয়ে প্র্যাকটিস করুন।

ধাপ ২: একটি ছোট জায়গা ঠিক করুন (বাড়ি থেকেও সম্ভব)

এই সমস্ত দোকান কিংবা ব্যবসার জন্য, সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হলো বাজার সংলগ্ন জায়গা। বড় রাস্তার পাশেই অথবা বাজারের পাশে একটি ছোট্ট জায়গা নিয়ে এই দোকান করাটা খুবই ভালো।

ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় টুলস কিনুন

উপরে বর্ণিত বেসিক টুলস ও কিছু অতিরিক্ত পার্টস স্টক রাখুন (স্ক্রু, কোল্ড ট্যাপ, আঠা ইত্যাদি)।

প্রথমে ছোট স্টক রাখুন; চাহিদা বাড়লে বেশি স্টক রাখুন।

ধাপ ৪: স্থানীয় স্তরে প্রচার করুন (Local Promotion)

১) পাশের দোকান-রেস্টুরেন্ট-স্কুলে ভিজিট করুন ও ভিজিটিং কার্ড দিন।

২) Facebook/WhatsApp গ্রুপে ব্যবসার বিজ্ঞাপন দিন।

৩) প্রথম কয়েকজন গ্রাহকের কাছে ডিসকাউন্ট দিন, ভালো রিভিউ নিন।

লাভ ও খরচের প্রাথমিক হিসাব

প্রাথমিক বিনিয়োগ (Initial Investment) — আনুমানিক

  • টুলকিট ও সরঞ্জাম: ₹5,000–₹20,000
  • সফটওয়্যার/ল্যাপটপ/ইন্টারনেট: ₹10,000–₹30,000 (একবারের সেটআপ)
  • পার্টস ও স্টক: ₹5,000–₹15,000
  • মোবাইল/প্রচার খরচ: ₹2,000–₹5,000

মোট শুরু খরচ: প্রায় ₹20,000–₹70,000 (আপনি কেমন শুরু করছেন তার ওপর নির্ভর করে)। তবে আমার মতে, প্রথমে ছোটভাবেই শুরু করুন, পরে পরে চাহিদা অনুযায়ী সমস্ত সরঞ্জাম দোকানে নিয়ে আসবেন এবং ব্যবসাটাকে বাড়ানোর চেষ্টা করবেন।

সম্ভাব্য আয় (Potential Income)

আপনি যেভাবে কাজ করবেন, আপনার দোকানে যত বেশি কাস্টমার আসবে সেই অনুযায়ী আপনার ইনকামটাও কম বেশি হবে। তাই আপনি কি ধরনের কাজ করছেন, প্রতি মাসে আপনার দোকানে কত পরিমান কাস্টমার আসছে, তার ওপর নির্ভর করে আপনার ইনকাম হবে। নিচে কাজের ধরন অনুযায়ী সম্ভাব্য ইনকামের ধারণা দেওয়া হলো।

ছোটখাটো কাজ (স্ক্রিন, ব্যাটারি বদল): লাভ প্রতি কাজ ₹300–₹1,500।

সফটওয়্যার কাজ (ফ্যাক্টরি রিসেট, আপডেট): ₹200–₹800।

মাসে যদি দৈনিক গড়ে 5–10 টা কাজ পান, মাসিক আয় হতে পারে ₹15,000–₹50,000 বা তার বেশি।

সেরা ক্ষেত্রে, সেবা ও পার্টস ঠিক রাখলে বছরে ভাল আয় করা সম্ভব।

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

এই কাজের জন্য কি কোনো লাইসেন্স লাগে?

ছোট ঘরোয়া সার্ভিস শুরু করতে সাধারণত বড় লাইসেন্স লাগে না। তবে ব্যবসা বড় করলে স্থানীয় কর/ট্যাক্স ও GST দেখুন এবং প্রয়োজন হলে রেজিস্ট্রেশন করুন।

রিপেয়ারিং কোর্স কোথা থেকে করব?

ITI, স্থানীয় ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বেসিক ও অ্যাডভান্সড কোর্স আছে। স্থানীয় মাস্টারের কাছে অ্যাপ্রেন্টিসশিপ করেও ভালো শেখা যায়।

পুরোনো পার্টস কোথা থেকে পাওয়া যায়?

স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স মার্কেট (স্পিয়ার পার্টস মার্কেট) থেকে পাবেন; অনলাইন বাজারেও (বড় ই-কমার্স/বিক্রেতা) অনেক পার্টস আছে। বিশ্বস্ত সাপ্লায়ার বেছে নিন।

শেষ কথা – ছোট পদক্ষেপেই শুরু করুন

মোবাইল রিপেয়ারিং এমন একটি ব্যবসা যেখানে পড়াশোনা কম হলেও স্কিল থাকলে ভালো আয় করা সম্ভব। শুরুতে ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন, ধীরে ধীরে অ্যাডভান্স লেভেলে যান। ঠিকভাবে শিখলে এই কাজ আপনাকে দীর্ঘদিন রোজগারের রাস্তা দেখাবে।

▪️ক্যারিয়ার সংক্রান্ত পোস্ট: এখানে পড়ুন

▪️WhatsApp Channel: Join Here


Spread the love

Leave a Comment