বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। কিন্তু টিউশন, ভাড়া, বিমা, টিকেট এসব মিলে বাজেট অনেক সময় মাথাব্যথার কারণ হয়। সেইজন্যই অনেকেই Education Loan নিতে চান। সঠিকভাবে লোন নিলেই আপনি পড়াশোনা, জীবনযাপন ও যাতায়াত নির্বিঘ্ন করে পরিকল্পনা করতে পারবেন। এই পোস্টে আমি সহজ ভাষায় ধাপে ধাপে বলছি – লোন কি, যোগ্যতা, কী ধরনের লোন আছে, কিভাবে আবেদন করবেন এবং কোন ডকুমেন্টগুলো লাগবে। শেষ পর্যন্ত আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
বিদেশে পড়ার জন্য Education Loan কী?
এডুকেশন লোন হচ্ছে একটি আর্থিক ব্যবস্থা যেখানে ব্যাংক বা নন-ব্যান্কিং ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি (NBFC) ছাত্র/ছাত্রীকে পড়াশোনার খরচ (টিউশন, থাকার খরচ, ফ্লাইট, বই, স্বাস্থ্য বীমা ইত্যাদি) মিটাতে টাকা দেয় – যা পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময় ও শর্তে কিস্তিতে ফেরত দিতে হয়।
লোনের অধীনে কোন কোন খরচ ধরা হয়?
- টিউশন ফি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য চার্জ
- থাকা-খাওয়া (hostel/room rent)
- টিকেট (এক বা দুইবার, দেশের নিয়ম অনুযায়ী)
- বই, ল্যাব, সরঞ্জাম ও কোর্স সম্পর্কিত খরচ
- মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স ও আবেদন/ভিসা ফি (কিছু ব্যাংক)
টিপ: লোন নিতে গেলে ব্যাংকে স্পষ্টভাবে বলুন কোন-কোন খরচ কভার করতে চান , সব ব্যাংক সব খরচ কভার করে না।
সম্পর্কিত পোস্ট পড়ুন
লোনের জন্য যোগ্যতা কি ? (Education Loan Eligibility Criteria)
ছাত্রছাত্রীদের জন্য যোগ্যতা
সাধারণত Admission Letter/Offer Letter থাকা বাধ্যতামূলক।
আবেদনকারীর বয়স, কোর্স টাইপ ও স্থায়িত্ব বিবেচ্য। UG/PG/PhD সব লোন পাওয়া যায়, তবে প্রতিষ্ঠানের ধরন ও কোর্সের মেয়াদকাল দেখেন।
প্রায়ই শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পূর্বের মার্কশিট চাওয়া হয় (বিশেষ করে গ্র্যাজুয়েট/পোস্টগ্র্যাজুয়েটের ক্ষেত্রে)।
সহ-আবেদনকারী বা Co-applicant-এর যোগ্যতা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে Co-applicant (অভিভাবক/মাতা-পিতা/স্বামী/স্ত্রী) লাগে, যাদের ইনকাম-স্টেবল ও ক্রেডিট-ওর্থি হওয়া উচিত।
Co-applicant-এর আয়ের উৎস (salary slip, ITR) দেখে ব্যাংক ঋণ অনুমোদন দেয়।
Co-applicant সাধারণত দেশের স্থায়ী ঠিকানায় থাকা ব্যক্তি হতেই হবে (কিছু ব্যতিক্রম আছে)।
টিপ: Co-applicant-এর ভালো ক্রেডিট ও নিয়মিত আয় থাকলে লোন অনুমোদন সহজ হয়।
লোনের প্রকারভেদ (Types of Education Loan)
সিকিউরড লোন (Secured Loan)
Collateral/Guarantee দরকার হয় — যেমন ফিক্সড ডিপোজিট, প্রপার্টি কাগজ বা গ্যারান্টর।
সুদের হার সাধারণত কম এবং অনুমোদন সহজ।
বড় পরিমাণ লোন (উচ্চ টিউশন বা পোষ্টগ্র্যাজুয়েট বিদেশি কোর্স) এর জন্য বেশি ব্যবহৃত।
আনসিকিউরড লোন (Unsecured Loan)
কোনো জামানত ছাড়া দেয়া হয়, কিন্তু সুদ কিছুটা বেশি হতে পারে।
ছোটো মেয়াদের বা সরল খরচের জন্য সুবিধাজনক।
Co-applicant থাকলেও ব্যাংক কখনো-কখনো অতিরিক্ত ডকুমেন্ট বা বেশি ইনকাম চায়।
টিপ: বড় লোন নিলে সিকিউরড লোন নেওয়া ভালো, কারণ সুদ কমে মোট খরচ নীচে আসে।
ধাপে ধাপে আবেদন করার পদ্ধতি (Application Process)
ধাপ ১: সঠিক ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়া
বিভিন্ন ব্যাংকের টার্মস, সুদ ও ডিস্বার্সমেন্ট নীতি তুলনা করুন।
সরকারি ব্যাংক (যেমন SBI, PNB) ও প্রাইভেট ব্যাংক—প্রতিটির সুবিধা-অসুবিধা আছে।

NBFC বা Education Loan-specialist কোম্পানির অফারও দেখুন — দ্রুত প্রসেসিং কিন্তু সুদ একটু বেশি হতে পারে।
ধাপ ২: আবেদনপত্র পূরণ করা
ব্যাংকের অফিসে বা অনলাইনে ফর্ম ভরুন।
Admission Letter, কোর্স ফি বিল ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন।
ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেওয়া
নিচে সম্পূর্ণ ডকুমেন্টস চেকলিস্ট দেওয়া হয়েছে এবং অরিজিনাল সঙ্গে নিয়ে যাচাই করান।
ধাপ ৪: লোন অনুমোদন ও বিতরণ (Sanction & Disbursement)
ব্যাংক ক্রেডিট-চেক, ইনকাম-চেক ও জামানত যাচাই করে অনুমোদন দেয়।
অনুমোদনের পরে টিউশনের নির্দিষ্ট পর্ব অনুযায়ী সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাইরেক্ট ডিস্বার্স করা হয় (বা কখনো ছাত্রের অ্যাকাউন্টে)।
ব্যাংক কখনো-কখনো ট্রাঞ্জেকশন করে কিস্তিভিত্তিকভাবে দেয়। তাই ডিস্বার্সমেন্ট শিডিউল আগে জেনে নিন।
টিপ: ডিস্বার্সমেন্ট সাধারণত ট্রেনিং/কোর্স শুরু হওয়ার আগে বা মার্কিন হিসেবে পর্বে পর্বে করা হয়—আপনার ইউনিভার্সিটির ব্যাঙ্কিং ইনফো আগে নিশ্চিত করুন।
আরো পোস্ট পড়ুন
Data Science কোর্স: জানুন কোর্স ফি, ভর্তি প্রক্রিয়া, ক্যারিয়ার সুযোগ
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের সম্পূর্ণ চেকলিস্ট (Document Checklist)
ছাত্রছাত্রীদের জন্য ডকুমেন্ট
- আবেদন ফর্ম (ব্যাংক ফরম)
- Admission/Offer Letter (ইনস্টিটিউশন থেকে)
- পাসপোর্ট কপি (আবেদনের সময়ে থাকা উচিত)
- ছবি (Passport size)
- কোর্স ফি Bill/Invoice বা Fee Schedule
সহ-আবেদনকারীর জন্য ডকুমেন্ট (Co-applicant)
Identity proof (Aadhaar / Passport / Voter ID)
Address proof (Utility bill / Aadhaar)
Income proof: Salary slip (last 3 months) / Form 16 / ITR (last 2 years)
Bank statement (last 6 months)
Employer certificate বা appointment letter (if applicable)
অ্যাকাডেমিক ডকুমেন্ট
Mark sheets & Degree Certificates (10th, 12th, Graduation)
SOP, LOR (কিছু ক্ষেত্রে)
IELTS/TOEFL স্কোর কার্ড (যদি প্রয়োজন হয়)
আয়ের প্রমাণপত্র (Income Proof)
Co-applicant salary slips, Form-16, employer certificate, business ITR (যদি self-employed হন)
Rental income বা অন্য আয়ের প্রমাণ (যদি থাকে)
জামানত বা Collateral সংক্রান্ত ডকুমেন্ট (যদি প্রয়োজন হয়)
Property papers (Title deed / Registered sale deed)
Fixed Deposit receipts (if using FD as collateral)
Guarantor documents (if required)
চূড়ান্ত টিপ: ব্যাংক আলাদা-আলাদা ডকুমেন্ট চাইতে পারে। আবেদন করার আগে তাদের ডকুমেন্ট লিস্ট মেইল করে নিন এবং অরিজিনাল কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
লোন শোধ করা কবে থেকে শুরু হয়?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মরটোরিয়াম পিরিয়ড থাকে — অর্থাৎ কোর্স চলাকালীন বা কোর্স শেষের পর এক নির্দিষ্ট গ্রেস-পর্যায় পর্যন্ত EMI শুরুর অবকাশ। উদাহরণস্বরূপ: কোর্স চলাকালীন শুধুমাত্র সুদ (interest) দিতে বলা হতে পারে; পুরো EMI শুরু হতে পারে কোর্স শেষ ও grace period পরে। নোট: ব্যাঙ্কভেদে নিয়ম ভিন্ন—আগে জেনে নিন।
সুদের হার (Interest Rate) কেমন হয়?
সুদের হার ব্যাংক ও লোন টাইপ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সাধারণভাবে সিকিওরড লোনে সুদ কম থাকে, আনসিকিউরড লোনে বেশি। সরকারী/সাবসিডি লাইনে বিশেষ স্কিম থাকলে আলাদা রেটও থাকে।
টিপ: সুদ-রকম বের করার সময় APR বা Effective rate দেখুন — কারণ Processing fee ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে প্রকৃত খরচ বোঝা যাবে।
লোন পেতে কতদিন সময় লাগে?
সাধারণত কাগজপত্র সম্পূর্ণ থাকলে ২ সপ্তাহ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে — তবে জামানত বা প্রপার্টি ভেরিফিকেশন করলে সময় বাড়তে পারে। NBFC বা প্রাইভেট প্লেয়ার দ্রুত (১–২ সপ্তাহ) করতে পারে।
প্রয়োগে সফল হওয়ার ব্যবহারিক টিপস (Practical Tips)
Admission Letter আগে নিশ্চিত করুন। প্রফেসর বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে ধরনের ফি-শিডিউল দেবেন, তা ব্যাংকে দেখান।
Co-applicant-এর আয়ের ডকুমেন্ট ঠিক করে রাখুন -Form-16/ITR ও ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট পরিষ্কার থাকলে অনুমোদন দ্রুত।
Collateral প্রস্তুত রাখুন, প্রয়োজন হলে বাড়ির পর্চাস বা FD জমানার অপশন রাখুন।
Processing fee ও অন্যান্য চার্জ পরিষ্কারভাবে জেনে নিন -লুকানো খরচ না থাকে তা নিশ্চিত করুন।
ডিস্বার্সমেন্ট শিডিউল মেনে চলুন — ইউনিভার্সিটির ফি পর্ব অনুযায়ী ব্যাংক টাকার ব্যাংক-টু-ইউনিভার্সিটি করে দেবে; নিজের অ্যাকাউন্টে সব ট্যাগ নয়।
উপসংহার (Conclusion)
বিদেশে পড়াশোনা আপনার জীবনের বড় বিনিয়োগ। আর Education Loan সেই যাত্রাকে বাস্তবের কাছাকাছি আনে। সঠিক তথ্য, সঠিক ডকুমেন্ট এবং ভালো-কঠোর পরিকল্পনা থাকলে লোন নেওয়া সহজ ও নিরাপদ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো Co-applicant-এর আয়ের স্থিতিশীলতা, Admission Letter-এর স্পষ্টতা, এবং ব্যান্ড-বাই-ব্যাংক শর্ত বুঝে নেওয়া।
Desclaimer: এই পোস্টে দেওয়া তথ্যগুলি সাধারণ জ্ঞানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। কোনো এডুকেশন লোনের আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ তথ্য যাচাই করে নিন। এই ওয়েবসাইট কোনো আর্থিক পরামর্শদাতা নয় এবং কোনো ব্যাংকের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।
▪️ ক্যারিয়ার সংক্রান্ত পোস্ট: এখানে পড়ুন
▪️ চাকরির খবর: Latest Update

আমি Biswajit Mandal, একজন অভিজ্ঞ Content Creator, YouTuber, এবং Professional Content Writer। গত ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি নিয়মিতভাবে সরকারি প্রকল্প, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, ক্যারিয়ার গাইড, স্কলারশিপ, ও অনলাইন ফর্ম ফিলাপ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করে আসছি।