পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য টাইম টেবিল বানানোর ৫টি কার্যকর নিয়ম (স্টুডেন্টদের জন্য)

Spread the love

পরীক্ষার সময় অনেক স্টুডেন্টই দুশ্চিন্তায় ভোগেন—কোন বিষয় আগে পড়বেন, কত ঘণ্টা পড়বেন, কিভাবে রিভিশন করবেন। এই সমস্যার সমাধান হলো একটি সঠিক টাইম টেবিল। শুধু পড়াশোনা করলেই হবে না, পরিকল্পনা অনুযায়ী পড়াশোনা করলে ফল অনেক ভালো হয়। তাই অধিকাংশ সফল শিক্ষার্থীদের সফলতার পিছনে এই সঠিক টাইম টেবিল কাজ করে। তাই এই পোষ্টের মাধ্যমে আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এই টাইম টেবিল নিয়ে আলোচনা করব। যাও সে আপনাদের কাজে লাগবে।

টাইম টেবিল বানানোর আগে এই ৩টি কাজ অবশ্যই করুন (The Preparation)

No-1: আপনার সম্পূর্ণ সিলেবাস জানুন ও বিষয়গুলিকে ভাগ করুন

প্রথমেই আপনার পুরো সিলেবাস বুঝে নিন। কোন অধ্যায় ছোট, কোনটি বড়, তা ভাগ করে নিলে পড়াশোনার সময় বণ্টন সহজ হয়। তার সঙ্গে আপনি চাইলে Previous year পরীক্ষার প্যাটার্ন দেখুন। তাহলে বুঝতে পারবেন কোন টপিকে বেশি প্রশ্ন আসে ,কোন টপিকে কম প্রশ্ন করা হয়।

No-2: কোন বিষয় কঠিন এবং কোনটি সহজ, তা চিহ্নিত করুন

নিজের শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা জরুরি। যেসব বিষয় কঠিন মনে হয়, সেগুলিতে বেশি সময় দিন। আর সহজ বিষয়গুলিকে অবহেলা না করে কম সময় দিন। যেমন – অনেক স্টুডেন্টস এমন রয়েছে যাদের math একটু কঠিন মনে হয়। তাই তাইলে আপনার দুর্বলতা বিষয়ে বেশি সময় দিন।

No-3: আপনার হাতে মোট কতদিন সময় আছে, তার একটি হিসাব করুন

পরীক্ষার তারিখ দেখে হিসাব করুন—মোট কতদিন আছে এবং প্রতিদিন কত ঘণ্টা পড়তে পারবেন। সেই অনুযায়ী টাইম টেবিল তৈরি করুন। তাহলে সময়ের মধ্যে আপনি খুব সহজেই আপনার ওই পরীক্ষার সমস্ত সিলেবাসটি কমপ্লিট করতে পারবেন।

Related Post

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেরা ৫ টি অ্যাপ

কার্যকর টাইম টেবিল বানানোর ৫টি গোল্ডেন রুল

নিয়ম ১: ছোট ছোট স্টাডি সেশনে ভাগ করুন (The Pomodoro Technique)

একটানা ঘন্টার পর ঘন্টা পড়লে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন। তাই পড়াশোনাকে ২৫ মিনিটের ছোট সেশন ভাগ করুন এবং প্রতিটি সেশনের পর ৫ মিনিট বিরতি নিন। এটিকে বলা হয় Pomodoro Technique। চারটি সেশন শেষ হলে ২০-২৫ মিনিটের বড় বিরতি নিন। এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজে যে কোন বিষয় বেশিদিন মনে রাখতে পারবেন।

নিয়ম ২: কঠিন ও সহজ বিষয়ের মিশ্রণ ঘটান (Mix & Match Strategy)

সব কঠিন বিষয় একসাথে পড়লে আপনি দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। তাই একটি কঠিন বিষয়ের পর একটি সহজ বিষয় রাখুন। এতে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়। তাই নিয়ম মেনে টাইম টেবিল তৈরি করে, কঠিন বিষয়গুলি একটি নির্দিষ্ট সময় পড়ার চেষ্টা করুন। তাহলে আর পড়ার প্রতি একঘেয়েমি আসবেনা।

নিয়ম ৩: শুধু পড়ার জন্য নয়, রিভিশনের জন্যও সময় রাখুন

Best study time table for students

পড়ে শেষ করলেই হবে না, বারবার রিভিশন না করলে মনে রাখা সম্ভব নয়। তাই প্রতিদিন বা অন্তত সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময় রিভিশনের জন্য রাখুন। তাতে আপনার বিষয়গুলো ভালোভাবে মনে থাকে। বেশিরভাগ সফল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শোনা যায়, তারা পড়াশোনাটা পাশাপাশি রিভিশন টাও করতো। তাই অবশ্যই যে কোন চাকরির পরীক্ষার প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য এর রিভিশন টা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

নিয়ম ৪: বিরতি, ঘুম এবং বিনোদনের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করুন

অতিরিক্ত চাপ নিলে পড়াশোনার মান কমে যায়। তাই পর্যাপ্ত ঘুম (৬-৮ ঘণ্টা) এবং কিছুটা বিনোদনের সময় রাখুন। এতে মস্তিষ্ক সতেজ থাকবে।

নিয়ম ৫: আপনার রুটিনটিকে নমনীয় বা ফ্লেক্সিবল রাখুন

প্রতিদিন হুবহু একই রুটিন মেনে চলা সবসময় সম্ভব হয় না। তাই রুটিনে কিছুটা নমনীয়তা রাখুন, যাতে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন হলেও চাপ অনুভব না হয়।

একটি নমুনা টাইম টেবিল (Sample Time Table for a Day)

সময়কাজ
সকাল ৬টা – ৭টাহালকা ব্যায়াম ও Tiffin
সকাল ৭টা – ৯টাকঠিন বিষয় (যেমন – গণিত/বিজ্ঞান)
সকাল ৯টা – ৯:৩০বিরতি
সকাল ৯:৩০ – ১১টামাঝারি কঠিন বিষয় (যেমন – ইংরেজি/ইতিহাস)
১১টা – ১২টারিভিশন (গতদিনের পড়া)
দুপুর ১২টা – ১টালাঞ্চ ও বিশ্রাম
দুপুর ২টা – ৪টা নতুন অধ্যায় পড়া
বিকাল ৪টা – ৫টা রিফ্রেশমেন্ট/খেলা
বিকাল ৫টা – ৭টাগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনুশীলন
রাত ৮টা – ৯টাসহজ বিষয় পড়া (যেমন – জিকে, বাংলা/হিন্দি)
রাত ৯টা – ৯:৩০রাতের খাবার
রাত ১০টা – ১০:৩০হালকা রিভিশন
রাত ১০:৩০ – ৬টাঘুম

বানানো রুটিন কীভাবে প্রতিদিন মেনে চলবেন? (Tips to Stay Consistent)

নিজের জন্য ছোট ছোট পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন (Reward System)

প্রতিদিন রুটিন মেনে চললে নিজেকে ছোট কোনো পুরস্কার দিন—যেমন পছন্দের গান শোনা বা প্রিয় সিরিজ দেখা। এতে অনুপ্রেরণা বাড়বে।

distraction বা মনোযোগ নষ্ট করে এমন জিনিস দূরে রাখুন

মোবাইল ফোন, গেমস বা সোশ্যাল মিডিয়া পড়াশোনার সময় থেকে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে মোবাইল সাইলেন্ট মোডে রাখুন। কারণ এখন বর্তমানে যেকোনো শিক্ষার্থীর ৯০ শতাংশ মনোযোগ মনোযোগ নষ্ট করে এই সোশ্যাল মিডিয়া। তাই এইগুলো থেকে আপনি দূরে থাকলে আপনি অন্যান্যদের তুলনায় এগিয়ে থাকবেন।

কোনোদিন রুটিন মিস হলে হতাশ হবেন না

একদিন টাইম টেবিল ভাঙলে দুশ্চিন্তা করবেন না। পরের দিন আবার নতুনভাবে শুরু করুন। ধারাবাহিকতা রাখাটাই সবচেয়ে জরুরি। তবে Decipline বজায় রাখার চেষ্টা করবেন।

আরো এই রকম Mind Mapping, Feynman Technique Follow করতে পারেন। Read More

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (Frequently Asked Questions – FAQ)

দিনে কত ঘণ্টা পড়াশোনা করা উচিত?

সবাইকে একভাবে বলা যায় না। তবে পরীক্ষার আগে দিনে অন্তত ৬–৮ ঘণ্টা পড়াশোনার চেষ্টা করুন।

পড়াশোনার জন্য সেরা সময় কোনটি? সকাল না রাত?

অনেকে সকালবেলা বেশি মনোযোগী হন, আবার কেউ রাতের নীরব সময়ে ভালো পড়তে পারেন। নিজের সুবিধামতো সময় বেছে নিন।

মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কোনো টিপস আছে?

হ্যাঁ। রিভিশন, নোট বানানো, চার্ট বা মাইন্ড ম্যাপ ব্যবহার করা এবং যথেষ্ট ঘুম মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়।

উপসংহার(Conclusion)

একটি সঠিক টাইম টেবিল আপনার পড়াশোনাকে আরও গুছিয়ে তুলতে পারে। উপরের নিয়মগুলি মেনে চললে পরীক্ষায় ভালো ফল করা অনেক সহজ হবে। মনে রাখবেন—নিয়মিত পড়াশোনা এবং ইতিবাচক মানসিকতা সফলতার আসল চাবিকাঠি। তাই আপনি যে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওই পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী সঠিক টাইম টেবিল তৈরি করুন। এবং অবশ্যই ওই টাইম টেবিল অনুযায়ী পড়াশোনা শুরু করুন।

▪️চাকরির বিভিন্ন পরীক্ষা: বিস্তারিত পড়ুন

▪️পরীক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন: এখানে পড়ুন


Spread the love

Leave a Comment