বর্তমানে বিদ্যুতের দাম এবং খরচ প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। অনেকেই চান নিজেদের বাড়িতে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখতে, যাতে মাসের শেষে বিদ্যুৎ বিলের চাপ একটু হলেও কমে। এই সমস্যার সমাধান দিতেই ভারত সরকার চালু করেছে প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর যোজনা। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তাদের বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে নিজেরাই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবেন এবং সরকার থেকে ভর্তুকিও (Subsidy) পাবেন।
এখন বিস্তারিতভাবে দেখে নেওয়া যাক—এই প্রকল্পটি কী, কারা আবেদন করতে পারবেন, কী কী কাগজপত্র লাগবে এবং কিভাবে অনলাইনে আবেদন করবেন। তাই আপনি যদি এই কেন্দ্র সরকারের যোজনার লাভ উঠাতে চান অবশ্যই এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর যোজনা আসলে কী? (What is PM Surya Ghar Yojana?)
প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর যোজনা হলো একটি কেন্দ্রীয় সরকারী প্রকল্প, যেখানে সাধারণ পরিবারগুলোকে তাদের বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
Related Post
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা: বাড়ি তৈরি করার জন্য আর্থিক সহায়তা

এতে দুটি বড় সুবিধা রয়েছে— ১) আপনার বিদ্যুৎ বিল কমে যাবে বা একেবারে শূন্য হতে পারে। ২) পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহার বাড়বে, যা দূষণ কমাতে সাহায্য করবে।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য কী কী?
নিচে এই যোজনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎ খরচ কমানো।
- গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে সোলার ব্যবহারের প্রসার ঘটানো
- নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো
- দেশের কার্বন নিঃসরণ কমানো
- মানুষকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল করা।
কারা পাবেন বিনামূল্যে বিদ্যুৎ?
১. যদি আপনার বাড়িতে সোলার প্যানেল বসানো থাকে, তাহলে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন।
২. সাধারণত ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ফ্রি পাওয়ার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
৩. ছোট পরিবার বা যাদের বিদ্যুৎ খরচ কম, তারা একেবারে বিদ্যুৎ বিলমুক্ত জীবনযাপন করতে পারবেন।
৪. বড় পরিবার বা বেশি খরচকারীরা আংশিক বিল কমানোর সুবিধা পাবেন।
আবেদনের জন্য আপনার কী কী যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন? (Eligibility Criteria)
প্রত্যেকেই এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন না। কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে।
আবেদনকারীকে কি বাড়ির মালিক হতে হবে?
হ্যাঁ, এই প্রকল্পে আবেদন করার জন্য অবশ্যই বাড়ির মালিক হতে হবে। ভাড়া বাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা এই সুবিধা পাবেন না।
কোন কোন পরিবার এই প্রকল্পের জন্য যোগ্য নয়?
- যারা সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন
- যাদের বাড়িতে আগে থেকেই সোলার সিস্টেম বসানো রয়েছে।
- যারা ভাড়াটে এবং নিজের নামে বাড়ি নেই
বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত কোনো শর্ত আছে কি?
হ্যাঁ, আবেদনকারীর নামে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকতে হবে এবং নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে আবেদন গ্রহণ নাও হতে পারে।
আবেদন করার আগে এই ডকুমেন্টগুলি প্রস্তুত রাখুন (Required Documents)
আবেদন করতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আগে থেকে প্রস্তুত রাখা দরকার।
পরিচয়পত্র হিসেবে কী লাগবে? (Identity Proof)
- আধার কার্ড বা ভোটার আইডি বা প্যান কার্ড
ঠিকানার প্রমাণপত্র (Address Proof)
- বিদ্যুৎ বিল
- রেশন কার্ড
- ভোটার আইডি
বাড়ির মালিকানার প্রমাণ (Ownership Proof)
- বাড়ির জমির খতিয়ান বা ডিড
- বাড়ির নামজারি কাগজ
সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ বিল (Latest Electricity Bill)
বিদ্যুৎ বিল অবশ্যই আপনার নামে থাকতে হবে।
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ (Bank Account Details)
সরকারি ভর্তুকির টাকা সরাসরি এই অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে।
- WB টোটো অনলাইন রেজিস্ট্রেশন: কিভাবে আবেদন করবেন? বিস্তারিত তথ্য জানুন
- বিদেশে পড়ার জন্য এডুকেশন লোন(Education Loan): জানুন আবেদন ও ডকুমেন্ট চেকলিস্ট
- সাইবার সিকিউরিটি কোর্স (Cyber Security Course Admission): জানুন ভর্তি, ফি এবং ক্যারিয়ারের সুযোগ
- গঙ্গাসাগর মেলা ২০২৬: তারিখ, পুণ্য স্নান, রুট ও নিরাপত্তা|Gangasagar Mela 2026
- পোস্ট অফিসে চাকরি|IPPB GDS Executive Recruitment 2025
ধাপে ধাপে অনলাইন আবেদন করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া (Step-by-Step Online Application Process)
এখন আসল কাজের অংশ—কিভাবে অনলাইনে আবেদন করবেন।

ধাপ ১: অফিসিয়াল পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন এর জন্য
প্রথমত, যান pmsuryaghar.gov.in ওয়েবসাইটে।
সেখানে “Apply for Rooftop Solar” অপশনে ক্লিক করুন।
বিদ্যুৎ কোম্পানির নাম এবং আপনার বিদ্যুৎ কনজিউমার নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।
ধাপ ২: মোবাইল নম্বর ও ইমেল ভেরিফিকেশন
রেজিস্ট্রেশনের পর আপনার মোবাইল এবং ইমেলে OTP যাবে। তা ভেরিফাই করুন।
ধাপ ৩: আবেদনপত্র পূরণ এবং ডকুমেন্ট আপলোড
ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করুন।( যেমন- আপনার নাম, বাবার নাম জন্মতারিখ ঠিকানা ইমেল আইডি মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি।)
বাড়ির বিবরণ দিন (ছাদে কতটুকু জায়গা আছে ইত্যাদি)।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করুন।
ধাপ ৪: ডিসকম (Discom) থেকে অনুমোদন লাভ
আপনার আবেদন স্থানীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে যাবে। তারা যাচাই করে অনুমোদন দেবে।
ধাপ ৫: প্ল্যান্ট ইনস্টলেশন এবং নেট মিটারের জন্য আবেদন
অনুমোদনের পর অনুমোদিত ভেন্ডরের মাধ্যমে সোলার প্ল্যান্ট বসানো হবে।
পরে নেট মিটার বসানো হবে, যাতে গ্রিডে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ পাঠানো যায়।
কীভাবে আপনার আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করবেন? (How to Check Application Status)
- অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে লগইন করুন।
- “Application Status” অপশন নির্বাচন করুন।
- আপনার আবেদন নম্বর দিয়ে স্ট্যাটাস চেক করুন।
- আপনার Application টি কি অবস্থায় রয়েছে আপনি চেক করতে পারবেন।
এই প্রকল্পে আপনি কত টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি (Subsidy) পাবেন?
- সোলার সিস্টেমের আকার অনুযায়ী কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে ভর্তুকি দেওয়া হবে।
- ১ থেকে ২ কিলোওয়াট সোলার সিস্টেমের জন্য ভর্তুকি = মোট খরচের প্রায় ৪০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাবেন।
- ২ থেকে ৩ কিলোওয়াট সোলার সিস্টেমের জন্য ভর্তুকি = এখানেও ৪০% ভর্তুকি দেওয়া হবে।
- ৩ কিলোওয়াটের বেশি সিস্টেমের জন্য সর্বোচ্চ ভর্তুকিসর্বোচ্চ ১০ কিলোওয়াট পর্যন্ত সিস্টেমে ভর্তুকি পাওয়া যাবে।
- সর্বোচ্চ ১০ কিলোওয়াট পর্যন্ত সিস্টেমে ভর্তুকি পাওয়া যাবে।
- ৩ কিলোওয়াটের বেশি হলে প্রথম ৩ কিলোওয়াটের জন্য ৪০% এবং বাকি অংশের জন্য ২০% ভর্তুকি দেওয়া হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (Frequently Asked Questions – FAQ)
না, অনলাইনে আবেদন করার জন্য কোনো ফি লাগে না।
সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে আসে।
না, সরকার অনুমোদিত ভেন্ডর লিস্ট থেকে কোম্পানি বেছে নিতে হবে।
উপসংহার (Conclusion)
প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর যোজনা শুধু একটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের প্রকল্প নয়, বরং সাধারণ মানুষের আর্থিক স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার দিকেও বড় পদক্ষেপ। যদি আপনার বাড়ির ছাদ ফাঁকা থাকে এবং যোগ্যতা থাকে, তবে অবশ্যই এই প্রকল্পে আবেদন করা উচিত। একবার সোলার প্যানেল বসিয়ে দিলে অনেক বছর ধরে আপনি এর সুবিধা পাবেন এবং মাসিক বিদ্যুৎ খরচ অনেকটাই কমে যাবে।
👉 তাই আর দেরি না করে আজই অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করুন। আর যদি আপনাদের এই যোজনা সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকে অবশ্যই অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন। এবং আপনি চাইলে এই পোস্টটির নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
PM Surya Ghar Yojana Official Website | Visit Here |
More Govt Schemes | Read More |
:

আমি Biswajit Mandal, একজন অভিজ্ঞ Content Creator, YouTuber, এবং Professional Content Writer। গত ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি নিয়মিতভাবে সরকারি প্রকল্প, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, ক্যারিয়ার গাইড, স্কলারশিপ, ও অনলাইন ফর্ম ফিলাপ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করে আসছি।