সিলেবাস শেষ হয়নি? পরীক্ষার আগে রাতে ৭টি স্মার্ট রিভিশন টিপস

Spread the love

পরীক্ষার আগের রাত সবসময় চাপের মনে হয়। মনে হতে পারে সিলেবাস এখনো বাকি, আর সময়ও নেই। কিন্তু আতঙ্কিত না হয়ে শান্তভাবে চিন্তা করলে আপনি বাকি সময়টুকুও সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবেন। মনে রাখবেন, শেষ মুহূর্তের রিভিশন টিপস মেনে চললে অল্প সময়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রিভাইস করা যায়। আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন, তাহলেই পরীক্ষার হলে মাথা ঠাণ্ডা রেখে উত্তর লিখতে পারবেন। তাই টেনশন ছাড়ুন ধৈর্য ধরুন।

আজকের এই পোস্টের মধ্যে ৭ টি কার্যকারী কৌশলের কথা বলবো। যেগুলো আপনি অনুসরণ করলে অবশ্যই লাভ পাবেন। তাই মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ুন।

লাস্ট মিনিট রিভিশনের ৭টি প্রমাণিত কৌশল (Proven Strategies)

১. নতুন কিছু নয়, শুধু গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলিতে ফোকাস করুন

এই সময় নতুন অধ্যায় বা অচেনা কিছু পড়া মানেই বিভ্রান্তি বাড়ানো। বরং সাজেশন, নোটস বা সিলেবাস অনুযায়ী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোতে মনোযোগ দিন। এতে মূল বিষয়গুলো রিভাইস হবে এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। বিশেষভাবে যে সমস্ত টপিক গুলিতে প্রতিবছর বেশি পরিমাণ প্রশ্ন আসে, ওই সমস্ত টপিকগুলি ভালোভাবে ফোকাস করুন। তাই নতুন কিছু না পড়ে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলি পড়ুন।

২. নিজের হাতে বানানো নোট বা সামারি পড়ুন (Skim Your Notes)

শেষ মুহূর্তে লম্বা বই খোলার সময় নেই। তাই আগে থেকে তৈরি করা শর্ট নোট, হাইলাইট বা সামারি-ই এখন আপনার সেরা অস্ত্র। নিজের লেখা দেখে পড়লে মনে রাখাও সহজ হয়। তাই সারাবছর পড়াশোনা করার সময় যে নোটস তৈরি করেছেন, যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হাইলাইট করেছেন, ওইগুলো একবার দেখে নিন।

৩. ফর্মুলা, ডায়াগ্রাম এবং কী-ওয়ার্ডগুলিতে চোখ বোলান

গণিতের ফর্মুলা, বিজ্ঞানের ডায়াগ্রাম, ইতিহাসের তারিখ বা গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞাগুলো এই সময় দ্রুত রিভাইস করতে হবে। যা একবার দেখলেই মনে পড়ে যাবে।

৪. অন্তত একটি পুরনো প্রশ্নপত্র (Previous Year Question) দেখুন

পুরনো প্রশ্ন দেখে বুঝতে পারবেন কী ধরণের প্রশ্ন আসে এবং কোন টপিক থেকে বেশি আসে। এটি আপনার প্রস্তুতিকে আরও সঠিক পথে নিয়ে যাবে। তাই সবসময় একটা কথা মাথায় রাখবেন যেকোনো পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বিগত বছরের প্রশ্নপত্র গুলি দেখতে হবে।

7 Smart Revision Tips for Students
7 Smart Revision Tips for Students

৫. পড়ার জন্য ছোট ছোট টাইম ব্লক তৈরি করুন (Pomodoro Technique)

২৫ মিনিট পড়ুন, ৫ মিনিট বিরতি নিন। এই কৌশল মনোযোগ ধরে রাখতে এবং পড়া বেশি সময় মনে রাখতে সাহায্য করে। একটানা অনেকক্ষণ পড়লে ক্লান্তি বাড়ে, কিন্তু ছোট সেশনে পড়লে কার্যকারিতা বাড়ে। তাই আপনার সিলেবাস অনুযায়ী সমস্ত চ্যাপ্টারগুলিকে ভাগ করে নিন। এবং সেই মতো পড়াশোনা করুন। 

৬. পর্যাপ্ত ঘুম এবং হালকা খাবার অপরিহার্য

সারা রাত জেগে পড়লে পরীক্ষার হলে মাথা কাজ করবে না। অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ভারী খাবারের বদলে হালকা খাবার খান, যাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দুটোই সতেজ থাকে।

৭. পরীক্ষার ঠিক আগে শান্ত থাকুন এবং আত্মবিশ্বাসী হন

পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে নোট ঝটপট দেখে নিন, তারপর নিজেকে শান্ত রাখুন। বিশ্বাস রাখুন, যতটুকু পড়েছেন তা যথেষ্ট। তাই পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে বেশি কিছু পড়াশোনার দরকার নেই শুধুমাত্র একবার চোখ বুলিয়ে নিন। যেমন- গুরুত্বপূর্ণ নোটস, হাইলাইট করা প্রশ্ন-উত্তর, ইত্যাদি।

সম্পর্কিত পোস্ট

পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য সঠিক টাইম টেবিল তৈরি করুন। কিভাবে তৈরি করবেন ?

পরীক্ষার আগের রাতে এই ভুলগুলি একেবারেই করবেন না (Mistakes to Avoid)

উপরের দেওয়া কৌশল গুলি তখনই কাজ করবে যদি আপনি নিচের ভুলগুলি না করে থাকেন। পরীক্ষার আগের দিন কোন কোন ভুলগুলি করা চলবে না তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

  • রাত জেগে পুরো বই পড়ার চেষ্টা করা: পরীক্ষার আগের দিন রাতে পুরো বই পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। রাত জেগে পড়লে পরের দিন আপনি ক্লান্ত অনুভব করবেন। তখন মনে থাকা জিনিসগুলোও আপনি ভুলে যেতে পারেন।এক রাতেই পুরো বই পড়া অসম্ভব। এতে কেবল ক্লান্তি আসবে:
  • বন্ধুদের সাথে নিজের প্রস্তুতি নিয়ে তুলনা করা: অন্যদের সঙ্গে তুলনা বন্ধ করুন। সবার পড়ার টেকনিক সমান নয়। সবাই সমস্ত কিছু একসঙ্গে মনে রাখতে পারে না। তাই আপনার প্রস্তুতি অনুযায়ী আপনি পরীক্ষা দিন। তাই অযথা বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা বন্ধ করুন।
  • অন্যরা কত পড়েছে তা নিয়ে চিন্তা করলে আত্মবিশ্বাস কমে যাবে: পরীক্ষার আগের দিন চিন্তা করলে ক্ষতি আপনার হবে। তাই যেটুকু প্রস্তুতি নিয়েছেন ওইটুকু দিয়ে পরীক্ষা দিন ভালোভাবে।
  • নেতিবাচক চিন্তা করা : পরীক্ষার আগের দিন খারাপ চিন্তা করবেন না। পজেটিভ থাকুন। সব সময় ভাবুন পরীক্ষাটা আপনার ভালোই হবে।
  • “হবে না” ভাবা বন্ধ করুন। ইতিবাচকভাবে ভাবুন—আপনার প্রস্তুতিই যথেষ্ট। তাই পরীক্ষার সেন্টারে যে প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে, যেগুলো আপনি পারবেন ওইগুলো প্রথম লেখার চেষ্টা করুন।

গুরুত্বপূর্ণ কথা

১) পরীক্ষার দিন যাবতীয় সরঞ্জাম লাগবে। যেমন- এডমিট কার্ড, পেন, জলের বোতল, ডকুমেন্টস, ইত্যাদি এগুলো সময়মতো গুছিয়ে নিন। কারণ পরীক্ষার দিন তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এগুলো না নিয়ে গেলে পরীক্ষায় বসতে পারবেন না।

২) অবশ্যই হালকা এবং পুষ্টিকর খাবার খান। পরীক্ষার আগের দিন রাতে যদি উল্টোপাল্টা খাবার খান, তাহলে শরীর খারাপ হতে পারে। তাই যতটা পারেন হালকা এবং পুষ্টিকর খাবার খান। এবং জল বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৩) মোবাইল থেকে দূরে থাকুন। সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং বন্ধ করুন। এটাই হবে আপনার প্লাস পয়েন্ট। মোবাইল এবং সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির কারণে ৯০% ও ছাত্রছাত্রীর সময় নষ্ট হয়। তাই পরীক্ষার আগে এবং পরীক্ষা চলাকালীন এই সমস্ত থেকে দূরে থাকুন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (Frequently Asked Questions – FAQ)

পরীক্ষার আগের রাতে কি নতুন কোনো অধ্যায় পড়া উচিত?

না, নতুন অধ্যায় পড়লে চাপ বাড়বে। বরং গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলিই রিভাইস করুন।

পড়া মনে রাখার জন্য কোনো দ্রুত কৌশল আছে কি?

ফ্ল্যাশকার্ড, শর্ট নোট আর ফর্মুলা চার্ট চোখ বুলানো সবচেয়ে কার্যকর।

পরীক্ষার হলে গিয়ে সব ভুলে গেলে কী করব?

শান্ত হয়ে গভীর শ্বাস নিন। প্রশ্নগুলো একবার ভালোভাবে পড়ুন, মনে আসা টপিকগুলো লিখতে শুরু করুন। ধীরে ধীরে সব মনে পড়বে।

Conclusion

তাই আমার মতে, বেশি চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। আপনি পরীক্ষার আগে যতটুকু যে চ্যাপ্টার গুলি কভার করেছেন ওই টাই যথেষ্ট। আপনার প্রিপারেশন অনুযায়ী পরীক্ষার Hall এ মন দিয়ে লেখার চেষ্টা করুন। এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা পরীক্ষার সেন্টারে প্রশ্নপত্র দেওয়ার পর আপনি যেগুলি পারবেন ওইগুলো প্রথম লেখার চেষ্টা করুন।

তাই পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষার সময় ঘাবড়ে গিয়ে লাভ নেই। বেশি চিন্তা করলে বরং আপনারই ক্ষতি হবে। কারণ যেটুকু আপনি পড়েছেন পরীক্ষার আগে বেশি চিন্তার কারণে ওইগুলোও ভুলে যাবেন। তাই চিন্তা বন্ধ করুন , মাথা ঠান্ডা রাখুন। আপনি পরীক্ষার আগে যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন, যতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছেন ওইভাবে পরীক্ষার সেন্টারে গিয়ে লিখুন।

▪️চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন: জানুন বিস্তারিত

▪️ক্যারিয়ার সংক্রান্ত পোস্ট: এখানে পড়ুন


Spread the love

Leave a Comment